কারেন্ট বিল বের করার সহজ নিয়ম
কারেন্ট বিল বের করার সহজ নিয়ম
আমাদের দৈনন্দিন জীবনের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ হলো বিদ্যুৎ বা কারেন্ট। সাধারণত বাসাবাড়ির বিদ্যুৎ ব্যবহারের জন্য প্রযোজ্য। ফ্যান, লাইট, টিভি, ফ্রিজ, এসি ইত্যাদি ব্যবহার করে যত ইউনিট বিদ্যুৎ খরচ হয়, তা অনুযায়ী বিল আসে। আবাসিক গ্রাহকদের জন্য ইউনিট প্রতি রেট তুলনামূলকভাবে কম এবং স্ল্যাব অনুযায়ী চার্জ ধার্য করা হয়।এটি ছাড়া আধুনিক জীবন প্রায় অকল্পনীয়। ঘর আলো করা থেকে শুরু করে ফ্রিজ, ফ্যান, এসি, মোবাইল চার্জ—সবই নির্ভর করে বিদ্যুতের উপর। আর এই বিদ্যুতের ব্যবহার অনুযায়ী প্রতি মাসে আমাদের একটি নির্দিষ্ট পরিমাণ বিল পরিশোধ করতে হয়। তবে অনেকেই সঠিকভাবে জানেন না কিভাবে এই বিল হিসাব করা হয়। এই লেখায় আমরা সহজভাবে শিখব কীভাবে নিজের বাসা বা দোকানের কারেন্ট বিল নিজেই বের করতে পারেন।
- কারেন্ট বিলের ধরন
- ইউনিট কিভাবে গণনা হয়
- ইউনিট অনুযায়ী চার্জ রেট
- ভ্যাট ও অন্যান্য চার্জ
- মিটার রিডিং পড়ার নিয়ম
- নিজে নিজে বিল ক্যালকুলেট করার পদ্ধতি
- একটি উদাহরণসহ প্র্যাকটিকাল ক্যালকুলেশন
- কিছু সচেতনতার পরামর্শ
কারেন্ট বিলের ধরন
বাংলাদেশে মূলত দুই ধরনের বিদ্যুৎ বিল হয়ে থাকে। ঘর বা বাড়ির ব্যবহারের জন্য আর অন্যটি দোকান, অফিস বা ছোট শিল্পকারখানার জন্য এক ধরনের ব্যবস্থা কে বলা হয় আবাসিক এবং অন্যটি বানিজ্যিক।এছাড়াও আছে শিল্প (Industrial), কৃষি (Agricultural), শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, হাসপাতাল ইত্যাদি বিশেষ শ্রেণির সংযোগ। তবে সাধারণ মানুষের জন্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো আবাসিক ও বাণিজ্যিক।বিদ্যুৎ বা কারেন্ট আমাদের আধুনিক জীবনের এক অপরিহার্য অনুষঙ্গ। ঘর থেকে শুরু করে অফিস, শিল্প-কারখানা, হাসপাতাল—প্রত্যেক ক্ষেত্রেই বিদ্যুতের ব্যবহার অপরিসীম। এই বিদ্যুৎ ব্যবহারের জন্য গ্রাহকদের একটি নির্দিষ্ট অংকের বিল দিতে হয়, যাকে আমরা সাধারণভাবে কারেন্ট বিল বলে থাকি। কিন্তু এই বিল সবার জন্য একই রকম নয়।দোকান, অফিস, রেস্টুরেন্ট, শপিং মল, ব্যাংক ইত্যাদির জন্য প্রযোজ্য। এখানে প্রতি ইউনিট বিদ্যুৎ খরচের হার আবাসিক বিলের চেয়ে বেশি, কারণ এখানে ব্যবহার বেশি এবং নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ প্রয়োজন হয়। ব্যবহার, শ্রেণি ও বিদ্যুৎ সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠানের নিয়ম অনুযায়ী এই বিলের ধরনে ভিন্নতা দেখা যায়।কারখানা, মিল, উৎপাদনশীল প্রতিষ্ঠান ইত্যাদির জন্য শিল্প শ্রেণিভুক্ত বিদ্যুৎ সংযোগ থাকে। এদের জন্য বিল একটু জটিল ও আলাদা নিয়মে নির্ধারিত হয়। অনেক সময় দিনে ও রাতে আলাদা রেট থাকে। বড় বড় শিল্পপ্রতিষ্ঠানের ক্ষেত্রে “Bulk” হিসেবে বিদ্যুৎ সরবরাহ করা হয়।চাষাবাদের জন্য পানি তোলার পাম্প ইত্যাদিতে ব্যবহৃত বিদ্যুৎ আলাদা হারে চার্জ করা হয়। অনেক দেশে কৃষি বিদ্যুৎ সংযোগে বিশেষ ভর্তুকি দেওয়া হয় যাতে কৃষকেরা কম খরচে চাষ করতে পারে।
ইউনিট কিভাবে গণনা হয়?
বিদ্যুৎ ব্যবহার পরিমাপ করা হয় কিলোওয়াট আওয়ার বা ইউনিট হিসেবে। ১ ইউনিট = ১ কিলোওয়াট-আওয়ার।আপনি যদি ১ কিলোওয়াট ক্ষমতার (যেমন ১০০০ ওয়াট) একটি যন্ত্র ১ ঘণ্টা চালান, তাহলে তা ১ ইউনিট বিদ্যুৎ খরচ করবে।অন্যদিকে ৫টি ১০০ ওয়াটের বাল্ব ২ ঘণ্টা চলে, তাহলে খরচ হবে = ৫ × ১০০ × ২ = ১০০০ ওয়াট-আওয়ার = ১ ইউনিট।
ইউনিট অনুযায়ী চার্জ রেট (আবাসিক)
ইউনিট (kWh) | প্রতি ইউনিটের দাম |
---|---|
০-৫০ | ৩.৫০ টাকা |
৫১-৭৫ | ৪.০০ টাকা |
৭৬-২০০ | ৫.৫০ টাকা |
২০১-৩০০ | ৬.০০ টাকা |
৩০১-৪০০ | ৬.৫০ টাকা |
৪০১-এর বেশি | ৭.০০ টাকা |
চলমান... | চলমান.. |
হিসাব করুন
কোন কোন যন্ত্র কত ইউনিট খরচ করে
যন্ত্রপাতি | বিদ্যুৎ খরচ (ওয়াট) | দৈনিক ঘণ্টা | দৈনিক ইউনিট | মাসিক ইউনিট |
---|---|---|---|---|
বাল্ব (LED) | ১০ ওয়াট | ৫ ঘণ্টা | ০.০৫ ইউনিট | ১.৫ ইউনিট |
ফ্যান | ৭৫ ওয়াট | ১০ ঘণ্টা | ০.৭৫ ইউনিট | ২২.৫ ইউনিট |
টিভি | ১০০ ওয়াট | ৬ ঘণ্টা | ০.৬ ইউনিট | ১৮ ইউনিট |
ফ্রিজ | ৩০০ ওয়াট | ২৪ ঘণ্টা | ২.৪ ইউনিট | ৭২ ইউনিট |
গিজার | ২০০০ ওয়াট | ১ ঘণ্টা | ২ ইউনিট | ৬০ ইউনিট |
প্রিপেইড ও পোস্টপেইড মিটারে পার্থক্য
কীভাবে বিদ্যুৎ খরচ কমানো যায়
ভ্যাট ও অন্যান্য চার্জ
আমরা সবাই মাস শেষে বিদ্যুৎ বিল দিই, কিন্তু অনেকেই জানি না সেই বিলে ঠিক কী কী চার্জ ধরা হয়। শুধুমাত্র ইউনিট খরচ নয়, এর সঙ্গে যুক্ত থাকে আরও কিছু বাড়তি খরচ, যার মধ্যে অন্যতম হলো ভ্যাট (VAT), সার্ভিস চার্জ ও ডিমান্ড চার্জ।
প্রথমত, ভ্যাট এটি বাংলাদেশে বিদ্যুৎ খাতে ৫% হারে নেওয়া হয়। অর্থাৎ যত ইউনিট বিদ্যুৎ ব্যবহার করবেন, তার মোট মূল্যের উপর ৫% ভ্যাট যুক্ত হবে।
দ্বিতীয়ত,ডিমান্ড চার্য এটি মূলত বাণিজ্যিক ও শিল্প খাতে বিদ্যুৎ ব্যবহারের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য হয়। এই চার্জ নির্ধারিত হয় সংযোগের ক্ষমতা (কেভিএ) অনুযায়ী।
তৃতীয়ত, সার্ভিস চার্জ – এটি একটি নির্দিষ্ট অঙ্ক যা বিদ্যুৎ সংযোগের রক্ষণাবেক্ষণ ও সেবা নিশ্চিত করার জন্য নেওয়া হয়রএছাড়াও কখনও কখনও বিলের মধ্যে জরিমানা যুক্ত হতে পারে, যদি সময়মতো বিল পরিশোধ না করা হয়।এইসব চার্জ একত্রিত হয়ে বিদ্যুৎ বিলের মোট অঙ্ক তৈরি করে। তাই কারেন্টের খরচ বুঝতে হলে কেবল ইউনিট নয়, এসব অতিরিক্ত চার্জও নজরে রাখতে হবে।
মিটার রিডিং পড়ার নিয়ম
বিদ্যুৎ বিল নির্ধারণের জন্য মিটার রিডিং খুব গুরুত্বপূর্ণ। মিটার দেখেই বোঝা যায় আপনি কত ইউনিট বিদ্যুৎ ব্যবহার করেছেন। নিচে ধাপে ধাপে মিটার রিডিং পড়ার নিয়ম দেওয়া হলো:
বেশিরভাগ ডিজিটাল মিটারে একটি ছোট স্ক্রিন থাকে, যেখানে সংখ্যা ঘুরতে থাকে। কেউ কেউ এনালগ মিটারও ব্যবহার করে, যেগুলোতে কয়েকটি চাকা ঘুরে ঘুরে সংখ্যা দেখায়।
মিটারের স্ক্রিনে যেই সংখ্যাটি দেখায় (যেমন: 015243), সেটি ইউনিট হিসেবে ধরা হয়। এটিই বর্তমান রিডিং।
আপনার পূর্বের বিদ্যুৎ বিল বা মিটারের আগের নোট করা সংখ্যা দেখুন। ধরুন, আগের রিডিং ছিল 014950।
নিজে নিজে বিল ক্যালকুলেট করার পদ্ধতি
ইউনিট (kWh) | প্রতি ইউনিট দাম (৳) |
---|---|
০–৭৫ | ৪.০০৳ |
৭৬–২০০ | ৫.৫০৳ |
২০১–৩০০ | ৬.৫০৳ |
৩০১–৫০০ | ৭.০০৳ |
৫০০+ | ৮.০০৳ |
কিছু সচেতনতার পরামর্শ
বর্তমান সময়ে বিদ্যুৎ আমাদের দৈনন্দিন জীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশ। বাসা-বাড়ি থেকে শুরু করে অফিস-আদালত, শিল্পকারখানা – সবখানেই বিদ্যুতের ব্যবহার অপরিহার্য। তবে দিনে দিনে বিদ্যুতের দাম বাড়ছে, এবং তার সাথে বাড়ছে আমাদের মাসিক বিদ্যুৎ বিল। তাই এই খরচ কমানোর একমাত্র উপায় হলো সচেতনতা। বিদ্যুৎ ব্যবহার নিয়ে কিছু সহজ নিয়ম মেনে চললে আমরা নিজেরাও বিল কমাতে পারি, এবং একইসাথে জাতীয় সম্পদ রক্ষা করতে পারি।
প্রথমত, সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো অপ্রয়জনে বিদুৎ অপচয় না করা। অনেকেই একটি ঘর থেকে অন্য ঘরে চলে গেলেও বাতি, ফ্যান বা এসি বন্ধ করেন না। এটি নিছক অলসতা হলেও এর প্রভাব পড়ে মাসিক বিলে। দিনের বেলায় যেখানে প্রাকৃতিক আলো রয়েছে, সেখানে বৈদ্যুতিক আলো ব্যবহার না করাই ভালো। দিনের আলো কাজে লাগানো শুধু বিল কমায় না, চোখের জন্যও আরামদায়ক।
দ্বিতীয়ত, এনার্জি এফিসিয়েন্ট যন্ত্রপাতি ব্যবহার করা অত্যন্ত কার্যকরী একটি উপায়। এলইডি বাল্ব, ইনভার্টার ফ্রিজ, স্মার্ট এসি – এগুলোর দাম হয়তো একটু বেশি, কিন্তু দীর্ঘমেয়াদে এগুলো বিদ্যুৎ খরচ অনেক কমায়। পুরনো ও বেশি বিদ্যুৎ খরচ করে এমন যন্ত্রপাতি ধীরে ধীরে বদলে ফেলা উচিত।
তৃতীয়ত, বিদ্যুৎ বিল বোঝার জন্য নিজেই রিডিং মিটার দেখা অভ্যাস গড়ে তোলা দরকার। এতে বোঝা যাবে কোন মাসে বেশি ইউনিট খরচ হয়েছে, এবং কেন হয়েছে – সেটা খতিয়ে দেখার সুযোগ পাওয়া যায়। অনেক সময় অস্বাভাবিক বিল আসার পেছনে ভুল মিটার রিডিং দায়ী হতে পারে, যেটা আপনি আগে থেকে জানলে সংশোধনের জন্য অভিযোগ করতে পারবেন।
আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ দিক হলো প্রিপেইড মিটার ব্যাবহার করা এতে আপনি আগে থেকে নির্দিষ্ট পরিমাণ টাকা রিচার্জ করে খরচ করতে পারবেন, যেমন মোবাইল ফোনে করে থাকেন। এতে খরচ কত হচ্ছে তা আপনি প্রতিনিয়ত দেখতে পারবেন এবং প্রয়োজন হলে নিয়ন্ত্রণ করতে পারবেন।সন্তাতানদের ছোট বেলা থেকে বিদ্যুৎব্যাবহার এ সচেতন করে তোলা ।তাদের বোঝাতে হবে যে, প্রতিটি বাতি, ফ্যান চালানো মানে একটি নির্দিষ্ট খরচ হচ্ছে, এবং সেই খরচ পরিবারের আয় থেকে যায়। শিশুদের মধ্যে এই মানসিকতা তৈরি হলে তারা ভবিষ্যতে আরো দায়িত্বশীল নাগরিক হয়ে উঠবে।
সবশেষে, বিদ্যুৎ বিল কমানো মানেই কেবল টাকা বাঁচানো নয়। বরং এটি একটি জাতীয় কর্তব্য ।আমরা যদি সবাই সচেতনভাবে বিদ্যুৎ ব্যবহার করি, তবে জাতীয় পর্যায়ে বিশাল পরিমাণ জ্বালানি সংরক্ষণ সম্ভব। যার ফলে দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নও ত্বরান্বিত হবে।ছোট ছোট অভ্যাস ও সচেতনতা দিয়েই আমরা বিদ্যুৎ বিল অনেকটা কমিয়ে আনতে পারি। এই বিষয়ে পরিবার, প্রতিবেশী ও সমাজকে সচেতন করা আমাদের সকলের দায়িত্ব। মনে রাখা উচিত বিদ্যুৎ বাঁচানো মানে দেশের সম্পদ রক্ষা করা।
বিদ্যুৎ বিল সেভিংস করার উপায়
লেখকের মন্তব্যঃআরও পড়ুন
বিদ্যুৎ হলো আধুনিক সভ্যতার প্রাণশক্তি। এর সুষ্ঠু ব্যবহার যেমন আমাদের জীবনকে সহজ করে তোলে, তেমনি অপব্যবহার আমাদের অর্থনৈতিক ও পরিবেশগত ক্ষতির মুখে ঠেলে দেয়। বিদ্যুৎ ব্যবহারে সচেতনতা শুধু ব্যক্তিগত সাশ্রয়ের বিষয় নয়, বরং এটি একটি বৃহৎ জাতীয় স্বার্থের সঙ্গেও জড়িত। বাংলাদেশের মতো উন্নয়নশীল দেশে যেখানে বিদ্যুৎ উৎপাদনের খরচ ক্রমাগত বাড়ছে, সেখানে প্রতিটি গ্রাহকের দায়িত্ব হলো বিদ্যুৎ ব্যবহারে সংযমী হওয়া এবং অপচয় রোধ করা।আমরা যদি গভীরভাবে বিষয়টি বিশ্লেষণ করি, তাহলে দেখতে পাবো প্রতিদিন আমাদের অজান্তেই কতভাবে বিদ্যুৎ অপচয় হচ্ছে। সকালে ঘুম থেকে উঠে যেই আলো জ্বালিয়ে রাখি, দুপুর গড়িয়ে বিকেল পেরিয়ে যায় – বাতি কিন্তু তখনো জ্বলছে। ঘরে কেউ নেই, তবুও ফ্যান ঘুরছে; এসির টেম্পারেচার ২০ ডিগ্রিতে সেট করা, অথচ বাইরের তাপমাত্রা হয়তো ৩০ ডিগ্রিরও কম। মোবাইল ফোন চার্জ হয়ে যাওয়ার পরেও চার্জার প্লাগে লাগানো থাকে, টিভি বন্ধ করা হয় না। শুধু সাউন্ড কমিয়ে রাখা হয়। এসব ছোট ছোট বিষয় যেন অদৃশ্যভাবে আমাদের মাসিক বিদ্যুৎ বিলকে বাড়িয়ে তোলে।এই বাস্তবতায় আমরা যখন বলি ‘সচেতন হোন’, তখন শুধু বিদ্যুৎ ব্যবহারে মিতব্যয়ী হোন বলি না বলি, আপনার প্রতিটি আচরণ যেন দায়িত্বশীল হয়। একটি মাত্র বাতি নিভিয়ে আপনি হয়তো মাত্র ৫ টাকার বিদ্যুৎ সাশ্রয় করলেন, কিন্তু যদি লাখ লাখ মানুষ একই কাজ করে— তাহলে তা হয়ে যায় কোটি টাকার সাশ্রয়। একদিকে যেমন ব্যক্তির পকেট বাঁচে, তেমনি রাষ্ট্রের খরচও হ্রাস পায়। বিদ্যুৎ খাতের উপর যে চাপ পড়ে, সেটাও অনেকটা লাঘব হয়।
লেখক হিসেবে আমার ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা থেকেও আমি বলতে পারি, আমরা অনেক সময় বুঝতেই পারি না কেন বিল এত আসে। একবার নিজের বাসায় নিয়ম করে মিটার রিডিং দেখতে শুরু করেছিলাম। প্রথম সপ্তাহে দেখলাম, দিনে প্রায় ৮ থেকে ১০ ইউনিট খরচ হচ্ছে। তখনই ভাবলাম – এটা কীভাবে কমানো যায়? অপ্রয়োজনীয় লাইট বন্ধ রাখলাম, পুরনো ফ্যান বদলে নতুন এনার্জি সেভার লাগালাম, এসির তাপমাত্রা ২৬ ডিগ্রিতে সেট করলাম, এবং বাচ্চাদের বললাম পড়ার সময় দিনের আলো যেন ব্যবহার করে। ফলাফল? পরের মাসেই প্রায় ৩০০-৪০০ টাকা কম বিল আসলো। এর মানে দাঁড়ায়, শুধুমাত্র সচেতনতার মাধ্যমেই বিদ্যুৎ খরচে বড় পার্থক্য আনা সম্ভব।বর্তমানে অনেকেই প্রিপেইড মিটার ব্যবহার করছেন, যেটা আসলে খুবই কার্যকর ব্যবস্থা। কারণ এতে বিদ্যুৎ খরচে একটা সীমাবদ্ধতা চলে আসে— আপনি যত খরচ করছেন, ততই টাকা কেটে যাচ্ছে। এতে মানুষ স্বাভাবিকভাবেই একটু সংযত হয়। প্রিপেইড ব্যবস্থায় প্রতিদিন, এমনকি প্রতি ঘণ্টায় কত ইউনিট খরচ হচ্ছে সেটা দেখা যায়। ফলে নিজের ব্যবহার নিয়ন্ত্রণ করা যায়। এটা যেন এক ধরনের “মাইক্রো সচেতনতা”।তবে এখানেই শেষ নয়। সচেতনতা কেবল ব্যক্তি বা পরিবারের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকলে হবে না। এ জন্য দরকার সামাজিক ও সকল ক্ষেত্র থেকে ঊদ্যগ।কারেন্ট বিলের ধরন বৈচিত্র্যময় এবং এটি নির্ভর করে গ্রাহকের শ্রেণি, ব্যবহার, বিল পরিশোধের পদ্ধতি ও বিদ্যুৎ কোম্পানির নীতির ওপর। কেউ যদি বিলের ধরন সম্পর্কে সচেতন থাকে, তাহলে সে নিজের বিদ্যুৎ ব্যবহারও পরিকল্পিতভাবে করতে পারে এবং অপ্রয়োজনীয় খরচ এড়াতে পারে। সরকারের পক্ষ থেকেও ভোক্তাদের সহজ, স্বচ্ছ এবং সাশ্রয়ী বিদ্যুৎ ব্যবহারে উৎসাহিত করা দরকার। সচেতনতা ও সঠিক ব্যবহারের মাধ্যমে আমরা সবাই মিলে বিদ্যুৎ ব্যবহারে ভারসাম্য আনতে পারি এবং ভবিষ্যতের জন্য টেকসই একটি সমাজ গড়তে পারি।এভাবেই আমারা সকল কিছু করতে পারি।
ইউনিভার্সাল এটুজেড এর নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url