পর্চা মূলত জমির প্রাথমিক দলিল। এটি জমির এক বা একাধিক মালিকের বিবরণ প্রদান করে
এবং সরকার ভূমি রেকর্ডে সংরক্ষিত থাকে। অপরদিকে খতিয়ান বলতে বোঝায় জমির মালিক
আনার বিস্তারিত বিবরণ। যার মাধ্যমে নির্ধারিত হয় কে জমির মালিক খতিয়ানে সাধারণত
মালিকের নাম জমির পরিমাণ মৌজা ,দাগ নাম্বার ও অন্যান্য প্রাসঙ্গিক তথ্য ও
অন্তর্ভুক্ত থাকে এবং এটি অন্তর্ভুক্ত থাকে ভূমি মন্ত্রণালয়ের অধীনে আর
এটিকেই বলা হয় ই পর্চা। বাংলাদেশের জমির মালিকানা সত্য নির্ধারণে ই পর্চা ও
খতিয়ান গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে ।জমির প্রকৃত মালিক কে এর উপর কার কতটুকু
অধিকার রয়েছে এবং কোন বিরোধ আছে কিনা এসব তথ্য জানতে হলে কি পর্চা ও
খতিয়ান অনুসন্ধান অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ও অপরিহার্য ভূমিকা পালন করে।
সাধারণ ব্যবসায়ী থেকে শুরু করে আইনজীবী ,জমি ক্রেতা, বিক্রেতা সবার জন্য এটি
গুরুত্বপূর্ণ বিষয়।
পেজ সূচিপত্রঃই পর্চা খতিয়ান অনুসন্ধান
পর্চা ও খতিয়ান অনুসন্ধান প্রয়োজনীয়তা
পর্চা ও খতিয়ান অনুসন্ধান পদ্ধতি
খতিয়ান চেক করব কিভাবে
জমি সেবার হটলাইন নাম্বার
ভূমির মালিকানা অনলাইনে যাচাই করব কিভাবে
ভূমির ঝামেলা এড়াতে খতিয়ান যাচাই এর গুরুত্ব
লেখক এর মন্তব্যঃ
পর্চা ও খতিয়ান অনুসন্ধানের প্রয়োজনীয়তা
জমির মালিকানা যাচাই এর ক্ষেত্রে জমি ক্রয় বিক্রয়ের আগে সঠিক মালিকানা যাচাই
করতে হবে। আইনগত সুরক্ষা এর ক্ষেত্রে স্বচ্ছতা নিশ্চিত করে ভবিষ্যৎ আইনি জটিলতা
এড়ানো যায়। ঋণ গ্রহণ এর ক্ষেত্রে ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠান থেকে ঋণ নিতে
জমির মালিক আনার দলিল দেখাতে হয়। এগুলোর ক্ষেত্রে দলিল গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা
পালন করে। উত্তরাধিকারী নিশ্চয়তা কারণ এর ক্ষেত্রে উত্তরাধিকার সূত্রে জমির
মালিকানা পাওয়ার ক্ষেত্রে খতিয়ান গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। এখানে উল্লেখিত
সকল বিষয়ে আমাদের খেয়াল থাকা উচিত। কিন্তু এর সমস্ত কিছু কিভাবে খেয়াল রাখব তা
পদ্ধতির মাধ্যমে আমরা জেনে নেব। জমির মালিকানা যা চাই, আইনগত সুরক্ষ্ ঋণ গ্রহণ,
উত্তরাধিকার নিশ্চয়তা করন, এর সকল কিছুই আমরা খুব ভালোভাবে অনুসন্ধান করে নেব
যাতে করে আমরা পরবর্তীতে কোন বিপদে না পড়ি।
পর্চা ও খতিয়ান অনুসন্ধানের পদ্ধতি
পর্চা অনুসন্ধানের প্রয়োজনীয়তা এর পাশাপাশি আমাদের জেনে নিতে হবে কিভাবে এর
পদ্ধতি অবলম্বন করতে হবে। চলুন আমরা জেনে নেই কিভাবে পর্চা ও খতিয়ানের
অনুসন্ধানের পদ্ধতি অবলম্বন করব। বর্তমান বাংলাদেশ জমির পর্চা ও খতিয়ান অনলাইনে
সহজলভ্য করেছে। যার মাধ্যমে আমরা সহজেই জমির যাবতীয় সমাধান পেয়ে থাকি এবং খুব
দ্রুত চিন্তা মুক্ত হই । ভূমির রেকর্ড অনুসন্ধানের জন্য নিচের ধাপ গুলো অনুসরন
করা যায়।
ভূমি মন্ত্রণালয়ের ওয়েবসাইটে প্রবেশ করতে হবে।
ভূমি মন্ত্রণালয়ের ওয়েবসাইটের
লিঙ্ক এই লিংক এ প্রবেশ করুন।
প্রয়োজনীয় তথ্য প্রদান করুন ।
যাবতীয় সকল তথ্য প্রদান করুন।
অনুসন্ধান করুন ।
সকল তথ্য প্রদান করলে আপনি আপনার সকল কিছু হিসাব দেখতে পাবেন।
খতিয়ান চেক করব কিভাবে
ভূমির সবকিছু জানার জন্য খতিয়ান চেক করা জরুরী। চলুন আমরা জেনে নেই কিভাবে
খতিয়ান চেক করতে হবে।
১.
ভূমি সেবা ওয়েবসাইটে যান: ব্রাউজারে গিয়ে
www.land.gov.bd
অথবা
www.eporcha.gov.bd
ওয়েবসাইটে প্রবেশ করুন। এখানে খতিয়ানের ধরন নির্বাচন করুন। দাগ নম্বর বা
হিসাব নম্বর দিয়ে খতিয়ান খুঁজতে পারবেন। এখানে আপনার জেলা উপজেলা সকল কিছু উল্লেখ
করুন। তাহলে আপনি আপনার সমস্ত জমি-জামার হিসাব পত্র নিঃসন্দেহে খুঁজে পাবেন।সব
তথ্য সঠিকভাবে পূরণ করার পর সাবমিট করুন।
আপনার জমির খতিয়ানের তথ্য স্ক্রিনে প্রদর্শিত হবে।
ভূমি অফিস থেকে খতিয়ান চেক করার পদ্ধতি
সংশ্লিষ্ট ইউনিয়ন ভূমি অফিস বা উপজেলা ভূমি অফিসে যান।
জমির মালিকানা, দাগ নম্বর ও খতিয়ানের ধরন সংক্রান্ত তথ্য নিয়ে যান।
আবেদনপত্র পূরণ করে অফিসের নির্ধারিত ফি জমা দিন।
নির্ধারিত সময় পরে অফিস থেকে আপনার খতিয়ান সংগ্রহ করুন।
এভাবে আপনি আপনার সকল তথ্য খুব সুন্দর ভাবে পেয়ে যাবেন।
জমির সেবা হটলাইন নাম্বার
ভূমি সংক্রান্ত তাদের হট লাইন নাম্বার হল ১৬১২২।
ভূমির মালিকানা অনলাইনে যাচাই করব কিভাবে
ভূমি মন্ত্রণালয়ের ওয়েবসাইট এ
গিয়ে আপনি মৌজা, জেলা, থানা, এবং দাগ নম্বর দিয়ে অনলাইনে খতিয়ান যাচাই
করতে পারেন। এবং আপনার সনাক্তকৃত ব্যক্তির সকল তথ্য সঠিকভাবে দিন তাহলে
সঠিকভাবে তার সফল তথ্য বেরিয়ে আসবে। এবং আপনি নিশ্চিন্তে তার জমি ক্রয় করতে
পারবেন। এই পর্চা সুবিধা বাংলাদেশের জন্য এক মঙ্গলময় বিষয়ের দৃষ্টান্ত
আমাদের সামনে উঠে এসেছে। এতে করে আমরা খুব সহজেই ঘরে বসে থেকেই জমি সকল সুযোগ
সুবিধা পেয়ে থাকি। আমাদের অফিসে অর্থাৎ ভূমি অফিসে দৌড়াদৌড়ি করতে হয় না
এটি আমাদের জন্য অনেক সৌভাগ্যজনক।
ভূমি বিরোধ এড়াতে খতিয়ান যাচাইয়ের গুরুত্ব
ভূমি বিরোধ এড়ানোর জন্য খতিয়ান যাচাই করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। খতিয়ান
হলো ভূমির মালিকানার প্রামাণ্য নথি, যা ভূমির প্রকৃত মালিক ও তার ইতিহাস
সম্পর্কে তথ্য প্রদান করে। যদি কেউ জমি কিনতে চায় বা নিজের মালিকানার
স্বপক্ষে প্রমাণ উপস্থাপন করতে চায়, তবে খতিয়ান যাচাই করা আবশ্যক।খতিয়ান
যাচাই করলে বোঝা যায়, প্রকৃতপক্ষে কে জমির মালিক। এতে প্রতারণার শিকার
হওয়ার সম্ভাবনা কমে।অনেক সময় ভূয়া দলিল দেখিয়ে জমি বিক্রির চেষ্টা করা
হয়। খতিয়ান যাচাই করলে এ ধরনের প্রতারণা ধরা পড়ে।সঠিক মালিকানা যাচাই না
করেই জমি কেনা হলে পরবর্তীতে আইনি জটিলতা দেখা দিতে পারে। খতিয়ান দেখে
নিশ্চিত হওয়া গেলে মামলা-মোকদ্দমার ঝুঁকি কমে। অপরদিকে
পূর্বপুরুষদের সম্পত্তির উত্তরাধিকার নির্ধারণে খতিয়ান গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা
রাখে। এটি দেখে বোঝা যায়, কার নামে জমি নিবন্ধিত আছে এবং কারা
উত্তরাধিকারী।সরকারি খতিয়ানে নাম অন্তর্ভুক্ত থাকলে তবেই জমির ওপর উন্নয়ন
কাজ, ব্যাংক ঋণ বা অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা পাওয়া সম্ভব হয়।এখানে
দিয়ে সার্চ করলে সব কিছু যাচাই করতে পারবেন।
ভূমি বিরোধের সমস্যা বাংলাদেশসহ অনেক দেশে একটি সাধারণ ও দীর্ঘস্থায়ী
সামাজিক-আইনি জটিলতা। লেখক হিসেবে আমার দৃষ্টিভঙ্গি হলো, খতিয়ান যাচাইয়ের
মাধ্যমে এ সমস্যার একটি কার্যকর সমাধান সম্ভব।
বর্তমানে অনেক মানুষ জমি কেনার আগে খতিয়ান যাচাই করেন না, যার ফলে প্রতারণার
শিকার হন এবং পরবর্তীতে মামলা-মোকদ্দমায় জড়িয়ে পড়েন। অথচ ভূমি সংক্রান্ত
তথ্য এখন ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মেও পাওয়া যাচ্ছে, যা সাধারণ মানুষের জন্য সহজতর
করেছে মালিকানা যাচাই প্রক্রিয়া।
আমার মতে, সরকারের ভূমি অফিসগুলোর আরও স্বচ্ছতা ও ডিজিটাল সেবার উন্নয়ন করা
উচিত, যাতে মানুষ সহজেই তাদের জমির তথ্য যাচাই করতে পারেন। পাশাপাশি, সাধারণ
জনগণের মধ্যে সচেতনতা বৃদ্ধি করতে হবে, যাতে তারা জমি ক্রয়ের আগে যথাযথ
কাগজপত্র যাচাই করেন এবং প্রতারণার শিকার না হন।
সবশেষে বলব, সঠিক খতিয়ান যাচাই শুধু ব্যক্তিগত স্বার্থরক্ষা নয়, এটি
সামগ্রিকভাবে সমাজে ন্যায়বিচার ও স্থিতিশীলতা নিশ্চিত করার একটি গুরুত্বপূর্ণ
উপায়। ভূমি বিরোধ কমাতে হলে আমাদের সবাইকে এ বিষয়ে আরও সচেতন হতে হবে এবং
সরকারি ভূমি ব্যবস্থাপনাকে আরও উন্নত করতে হবে। তাই আমাদের সব দিক ভেবে কাজ করা
উচিত।এবং আমারা সাবধানতার সহিত সকল কাজ করব।
ইউনিভার্সাল এটুজেড এর নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url